প্লায়োমেট্রিক্স কি জেনে নিন এবং ব্যাবহার করুন
কাকে বলে প্লায়োমেট্রিক্স?
দক্ষিণ কলকাতার একটি ফিটনেস স্টুডিয়োর সঙ্গে যুক্ত ট্রেনার চন্দন সাহা বলছেন, ‘‘একটা কথা দেখবেন আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি, সেটা হচ্ছে ‘লাফ-ঝাঁপ’। প্লায়োমেট্রিক্সের মূলেও রয়েছে লাফ আর ঝাঁপের যুগলবন্দি। জাম্প স্কোয়াটস, স্কিপিং, বারপিস, স্কোয়াট জাম্প, ফ্রগি জাম্প, জাম্পিং লাঞ্জেস সবই প্লায়োমেট্রিক্সের অংশ। তবে যাঁদের হাঁটুতে ব্যথা আছে, কোমরে কোনও সমস্যা আছে, তাঁরা অতি অবশ্যই এই ধরনের ব্যায়াম করার আগে আপনার চিকিৎসক ও ট্রেনারের পরামর্শ নেবেন। বিশেষ করে হাঁটুর কোনও সমস্যা থাকলে বারংবার লাফ দিলে তা আরও বাড়তে পারে।’’
কীভাবে কাজ করে
প্রতিবার লাফ দেওয়ার সময় আপনার মাসল বেশ খানিকটা স্ট্রেচ করে। পা এসে মাটিতে ঠেকলে পরের লাফটার জন্য আরও বেশি শক্তি পাওয়া যায়। স্ট্রেচিং আর কনট্র্যাকশনের এই মিলমিশটাই মাসলের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ক্রমশ তার শক্তি বাড়তে আরম্ভ করে। সেই সঙ্গে ইনভলান্টারি নার্ভাস রিফ্লেক্স আর মোটর কো-অর্ডিনেশন উন্নত হয়।
কোন কোন মাসল গ্রুপের জোর বাড়ায়
গ্লুটস আর পায়ের শক্তি বাড়াতে দারুণ কার্যকর এই টেকনিক। বাড়ায় আপনার কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেমের ক্ষমতাও। বিশেষ করে যাঁরা দৌড়তে ভালোবাসেন বা বহুদিন কোনও না কোনও খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং মোটামুটি ফিটনেস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে প্লায়োমেট্রিক্স দারুণ কাজে দেয়। বাড়ায় মাসলের পাওয়ার আর ফ্লেক্সিবিলিটি। তবে একটা ব্যাপারে খুব যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পারসোনাল ট্রেনার ইকবাল শেখ, ‘‘এই টেকনিক আপনি ঘরের মধ্যে তো বটেই, আউটডোরেও প্র্যাকটিস করতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেন ল্যান্ডিংটা সমান এবং নরম জায়গায় হয়। তা না হলে কিন্তু পায়ে চোট পেতে পারেন। আর যদি আপনার ফিটনেস একেবারে তলানিতে ঠেকে থাকে, তা হলে গোড়াতেই এই ধরনের ব্যায়াম করার পরামর্শ আমি অন্তত দিই না। মোটামুটি ফিট যাঁরা, তাঁরাই এগুলি ট্রাই করে দেখুন।’’
কোন কোন সাবধানতা অবলম্বন করবেন
ট্রেনারের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। নিরাপদে জাম্প করার কিছু পদ্ধতি আছে, সেগুলি মেনে চলতে হবে। প্রথম দিন থেকেই খুব কঠিন কিছু ট্রাই করতে যাবেন না, ধীরে ধীরে ব্যায়ামের ইন্টেনসিটি বাড়ান। প্রতিদিন প্লায়োমেট্রিক্স করার ব্যাপারে অনেক ট্রেনারই আপত্তি করেন। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, মাসলগুলিকে যথেষ্ট বিরতি না দেওয়া হলে তার ক্ষয় শুরু হতে পারে। তার চেয়ে আপনার রোজের ব্যায়ামের টেকনিকে কিছু এই ধরনের ব্যায়াম যোগ করতে পারেন। যেমন ধরুন, যোগব্যায়ামের সঙ্গে ১৫টি বারপিস করলেন। পায়ের ব্যায়াম যেদিন করবেন সেদিন ৩০টা করে জাম্পিং লাঞ্জেস করলেন প্রতি সেটের পর — এতে চট করে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। আর্থরাইটিস বা অস্টিওপোরোসিসের মতো সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, প্লায়োমেট্রিক্স থেকে তাঁদেরও সাধারণত দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। হাড়ে ঘর্ষণ হয় এমন কিছু করতে যাবেন না, তবে হাড় ও মাসলের জোর বাড়ায় এমন ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ নেই। গর্ভবতী মহিলারাও প্লায়ো ট্রাই করতে যাবেন না। বাচ্চা বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ব্যালান্সের স্তরে তারতম্য আসবে, ল্যান্ড করার সময় পড়েও যেতে পারেন মুখ থুবড়ে। হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল থাকলেও এই ধরনের ব্যায়াম থেকে দূরে থাকাই উচিত।
প্লায়োমেট্রিক্স করার জন্য কী কী প্রয়োজন
পুরোপুরি ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ়। সেই অর্থে কোনও যন্ত্রের প্রয়োজন নেই। খুব ঘাম হয়, তাই যাঁরা ঘাম ঝরানো ব্যায়াম পছন্দ করেন না, তাঁরা চটপট কাহিল হয়ে পড়বেন। যাঁরা শরীর সুগঠিত ও টোনড করে তুলতে চান, তাঁদের তেমন কাজ হবে না। পায়ের শক্তি বাড়বে বটে, তবে হাত বা কোর মাসলের টোনিংয়ের জন্য আপনাকে অন্য ব্যায়াম বা ওয়েট ট্রেনিংয়ের উপর আস্থা রাখতে হবে। সাধারণত দেখা যায় যে প্লায়োমেট্রিক্সের স্কিল ধারালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মনঃসংযোগও। কারণ খুব কম সময়সীমায় অনেক জটিল মুভমেন্ট করার সময়ে অন্যমনস্ক হওয়া চলে না এবং তা দৈনন্দিন জীবনেও ছাপ ফেলে পরবর্তীকালে।
No comments: