জেনে নিন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে ব্রাউন রাইস এর উপকরণ
প্রাচীনকালে গ্রাম বাংলার মানুষ ঢেঁকি ছাঁটা চাল খাওয়ায় অভ্যস্ত ছিলেন। বর্তমানে উন্নত সমাজ সেই চালেরই নামকরণ করেছে ব্রাউন রাইস। এই চালের উপরিভাগে ধানের তুষের কিছু অংশ থেকে যায়। এই চাল পালিশ করা হয় না। তাই দেখতে খানিকটা লালচে ধরনের হয়ে থাকে। আর পালিশ করা হয় না বলে সাধারণ চালের তুলনায় এর পুষ্টিগুণ কয়েকগুণ বেশি।
অনেকের ধারণা ভাত খেলে মেদ বৃদ্ধি হয়, ঘুম পায়। তবে ব্রাউন ব্রাউন রাইস বা ঢেঁকি ছাঁটা চালের বিষয়ে এই ধারণাগুলিকে ভ্রান্ত বলেই মনে করেছেন চিকিৎসকরা। ব্রাউন রাইস আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী, এ কথা আমরা অনেকে জানি ঠিকই তাবে এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানি না। ব্রাউন রাইসে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যগুণ যা আমাদের শরীরের পুষ্টিগত চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্রাউন রাইসের একাধিক স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে...
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকেবেশ কিছু স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ব্রাউন রাইসে উপস্থিত ফাইবার, পলিফেনল এবং পাইটিক অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এতে থাকা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। ফলে সুগার লেভেল হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। কিন্তু সাদা ভাত খেলে একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। সেই কারণেই তো ডায়বেটিকদের সাদা ভাত খেতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর হয়ব্রাউন রাইসে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দিয়ে একদিকে যেমন শরীরকে বিষমুক্ত করে, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গত, ব্রাউন রাইসের অন্দরে সুপারঅক্সাইড নামে একটি বিশেষ ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খোঁজ পাওয়া যায়, যা কোষেদের ক্ষতি হওয়ার থেকে বাঁচায়। সেই সঙ্গে সেলেদের শরীরে অক্সিডেশন ড্যামেজ যাতে বেশি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের ক্ষয় রোধ হয়, সেই সঙ্গে রোগ ভোগের আশঙ্কাও কমে।
ওজন কমায়
অতিরিক্ত ওজনের কারণে চিন্তায় রয়েছেন? এদিকে ভাত ছাড়া বাঁচা বেশ কঠিন? তাহলে তো ব্রাউন রাইস খাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায়ই নেই। এই বিশেষ ধরনের চাল দিয়ে তৈরি ভাত, শরীরে প্রবেশ করার পর আমাদের দেহের বিভিন্ন জয়গায় জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিকে ঝরিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ভাল কোলেস্টেরল বা এইচডিএল এর মাত্রা বাড়ায়। ফলে একদিকে যেমন ওজন কমতে থাকে, তেমনি অন্যদিকে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
অ্যালঝাইমার রোগ দূরে থাকে
ব্রাউন রাইসে থাকা একাধিক পুষ্টিকর উপাদান মস্তিষ্কের অন্দরে প্রোটিলেন্ডোপেটিডেস নামক একটি ক্ষতিকর এনজাইমের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে ব্রেনের ডিজেনারেশন হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। আর এমনটা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ডিমেনশিয়া, অ্যামেনসিয়া এবং অ্যালঝাইমার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়
প্রতিদিন ব্রাউন রাইস খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে ফাইবারের ঘাটতি দূর হয়। ফলে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটার মধ্যদিয়ে একদিকে যেমন হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি কনস্টিপেশনের মতো রোগও দূরে পালায়। তাই যাদের জীবন গ্যাস-অম্বলের চোটে জর্জরিত, তারা ব্রাউন রাইস খাওয়া শুরু করতে পারেন। দেখবেন উপকার মিলবে।
হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত ব্রাউন রাইস খাওয়া শুরু করলে শরীরে সেলেনিয়াম নামক একটি উপাকারি উপাদানের ঘাটতি দূর হয়। এই উপাদানটি আর্টারির দেওয়ালে জমতে থাকা ময়লা দূর করে হার্টে রক্ত প্রবাহের উন্নতি যেমন ঘটায়, তেমনি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলকে স্বাভাবিক রাখার মধ্যদিয়ে হার্টের দেখভালেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ক্যানসার রোগকে দূরে রাখে
গত কয়েক দশকে যেভাবে সারা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশেও ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পয়েছে, তাতে ব্রাউন রাইস খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পয়েছে। কেন এমন কথা বলছি, তাই ভাবছেন তো? আসলে ব্রাউন রাইসের শরীরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কোলন এবং ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণাতে এও দেখা গেছে যে লিউকেমিয়ার মতো ক্যান্সারের প্রতিরোধেও এই চালটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
No comments: