সংসারের কোন কাজে কত ক্যালোরি যায় জানতে চান
অফিস আর সংসার সামলে হাতে এমন সময় থাকে না যে শরীরের যত্নের জন্য জিম বা যোগব্যায়ামের ক্লাসে ভর্তি হবেন? খেয়াল করে দেখুন, আমাদের মা-দিদিমারাও কিন্তু আলাদা করে ব্যায়াম না করেই সুস্থ থাকতেন! ঘরের-দোর পরিষ্কার বা সংসারের সাধারণ কাজেও কিন্তু ভালোই ক্যালোরি পোড়ে। জেনে নিন তারই সঠিক হিসেব, আর বেছে নিন আপনার পছন্দসই অ্যাক্টিভিটি।
বাথরুম পরিষ্কার: বাথরুম আমরা সবাই রোজ ব্যবহার করি, তাই স্নানঘর পরিষ্কার রাখাটা খুব জরুরি। বাথরুমের দেওয়াল, মেঝে, বেসিন, কমোড ঘষে ঘষে তকতকে করে ফেলুন ব্রাশ দিয়ে। উবু হয়ে বসে যখন মেঝেটা স্ক্রাব করবেন, তখন যেন হাঁটুতে চোট না লাগে বা সাবানজলে পা পিছলে না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। আপনার হাত, পেট, কোমর সুঠাম ও সুডৌল থাকবে এর ফলে। যদি এই সময় পেটটা ভিতর দিকে টেনে ধরে রাখতে পারেন, তা হলে খুব ভালো হয়। বাথরুমে ঘণ্টাখানেক কাজ করার পর আপনার অন্তত 256 ক্যালোরি খরচ হওয়ার কথা। যাঁদের বিপাক ক্রিয়ার হার বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে আরও খানিকটা বেশি ক্যালোরি খরচ হতে পারে।
গাড়ি ধোওয়া: গাড়ি বা স্কুটি ধোওয়ার কাজটা যাঁরা নিজে হাতে করেন এবং করতে ভালোবাসেন, তাঁরা জানেন যে রীতিমতো ঘাম ঝরানো পরিশ্রম হয় এর ফলে। জল দিয়ে প্রথমে গোটা গাড়ি ধোওয়া, তারপর সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে ময়লা তোলা, কাচ পরিষ্কার, গাড়ির ভিতর ডাস্টিং, তার পর ফের জল ঢেলে সাবান ধোওয়া... ব্যাপারটা বেশ শ্রমসাধ্য। পুরো শরীরের ওয়ার্কআউট হয় এর ফলে। হাত, পা, পেট এবং কোর মাসলের উপরেও কাজ করে। কানে হেডফোন গুঁজে নিন, চালিয়ে দিন আপনার পছন্দের কোনও গান, পেটের মাসলগুলো একটু টেনে ধরে রাখুন কাজটা করার সময়। ঘণ্টাখানেক পর আপনার অন্তত ৩০০ ক্যালোরি পোড়ার কথা। ব্যাপারটা শুনতে সহজ লাগলেও মনে রাখবেন ৪৫ মিনিট সাঁতার কাটার পর তবে ৩০০ক্যালোরি পোড়ে।
ঘর মোছা: ঘর মোছার আগে যদি ঘর ঝাঁট দেওয়ার ধাপটাও যোগ করে নেন, তা হলে ক্যালোরি পোড়ার হার আরও বাড়বে। ঘরের আনাচ-কানাচ, বিছানার আশপাশ, আলমারির পিছন সব ঝাঁট দিন প্রথমে, আধ ঘণ্টার সেশনেই ১৫০ ক্যালোরি পোড়ার কথা। ঘর মোছার সময় প্রায় গাড়ি ধোওয়ার মতোই পরিশ্রম হয়। আপনি আধ ঘণ্টা ১৫০ও এক ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ ক্যালোরি বার্ন করতে পারবেন। তবে হাঁটুতে যেন চোট না লাগে সেটা দেখবেন। আর মেঝেতে পড়ে থাকা জলে যেন পা না হড়কে যায়।
ধুলো ঝাড়া: তুলনামূলকভাবে কম ক্যালোরি পোড়ে, এক ঘণ্টায় ১৭০-এর কাছাকাছি। তা ছাড়া যাঁদের ধুলোয় অ্যালার্জি আছে, তাঁরা সাবধান। মুখে মাস্ক লাগিয়ে বা একটা কাপড় বেঁধে নিয়ে তার পরই ডাস্টিংয়ের কাজে লাগুন।
জানলা পরিষ্কার: জানলা পরিষ্কার করাটাও বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রথমে শুকনো কাপড়ে ধুলো, ঝুল মোছা দরকার। তার পর সাবানজল দিয়ে ঘষে ঘষে ময়লা তুলে সাবানের দাগ ধুতে হবে। শেষে আবার শুকনো কাপড়ে মোছা। তার মানে প্রতি জানলাপিছু আপনার খরচ হবে অন্ততপক্ষে ১০ মিনিট। বাড়িতে ১০টি জানলা থাকলে অন্তত দেড় ঘণ্টার ধাক্কা। অন্তত ৩০০ ক্যালোরি পোড়ার কথা। আধ ঘণ্টা সার্কিট ট্রেনিং করলে এতটা ক্যালোরি খরচ হয়।
কাপড় কাচা: ওয়াশিং মেশিনের সামনে উবু হয়ে বসা, এক এক করে কাপড় ঢোকানো মানে আপনি আসলে স্কোয়াট করছেন। সচেতনভাবে স্কোয়াট করতে করতেই কাজটা করুন। ‘‘করার সময় দেখে নেবেন আপনার কোয়াড মাসল আর হ্যামস্ট্রিংয়ে প্রেশার আসছে কিনা। তা হলে থাই আর পা ক্রমশ সুডৌল হয়ে উঠবে’’, বলছেন ফিটনেস ইন্সট্রাক্টর অলক বসু। যদি আপনি ওয়াশিং মেশিন না ব্যবহার করেন, তা হলে একটা ছোট টুলে বসে কাপড় কাচুন। বারবার নিচু হয়ে মাটিতে রাখা বালতি থেকে কাপড় তুলে ধোওয়ার চেষ্টা করবেন না, তাতে কোমরের উপর বাড়তি চাপ পড়বে। কাচা কাপড় শুকোতে দেওয়া, তোলা, ভাঁজ করা, ইস্ত্রি করার মাধ্যমেও আরও কিছু ক্যালোরি খরচ হবে। সব মিলিয়ে এক ঘণ্টার কাজের শেষে অন্তত ২৫০-৩০০ ক্যালোরি খরচ করতে পারবেন।
বাজার করা ও রান্না করা: বাজার করতে আপনার অন্ততপক্ষে আধ ঘণ্টা সময় লাগবে। তার মানে সেই আধ ঘণ্টা হাঁটা তো হলই, সেই ভারী একটা বাজারের ব্যাগও বইলেন। তাতে হাত টোনড হবে। তার পর বাড়িতে এসে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে, আনাজ কেটে, মশলা বেটে রান্না করুন। এতে আপনার ও আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আর এই পুরো পদ্ধতিটা শেষ হলে আপনি অন্তত ২৫০ ক্যালোরি কমাতে পারবেন। সেই সঙ্গে খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনুন। খুব বেশি তেল-মশলা দিয়ে রান্না করবেন না। তা হলেই দেখবেন শরীর ভালো থাকছে।
No comments: