গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে মহিলাদের এই ১০টি ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা উচিৎ
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। এর পাশাপাশি তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন দুর্বল হয়, তেমনি নারীদেরও জ্বরের মোকাবিলা করতে হয়। গর্ভাবস্থায় জ্বর নারী ও শিশুর ক্ষতি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় জ্বরকে একেবারেই অবহেলা করবেন না। জ্বর থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে দেখতে পারেন। গর্ভাবস্থায় জ্বরের কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় জ্বরের কারণ
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের থেকে কমে যায়। এ কারণে নারীরা যেকোনো সংক্রমণ, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হন। গর্ভাবস্থায় জ্বরের আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন-
ঠাণ্ডা ও ফ্লুর পাশাপাশি মহিলাদেরও জ্বর হতে পারে। সংক্রমণ মহিলাদের জ্বর হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় জ্বরের কারণও হতে পারে ফ্লু। ফ্লুতে মহিলারা শরীরে ব্যথা, জ্বরের মতো উপসর্গ অনুভব করতে পারেন।
একটি মূত্রনালীর সংক্রমণও গর্ভাবস্থায় জ্বরের কারণ হতে পারে।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ভাইরাসের কারণেও জ্বর হতে পারে। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে বমি, ডায়রিয়া এবং জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় জ্বর সারাতে ঘরোয়া উপায়
গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে আপনি চাইলে কিছু ঘরোয়া উপায়ও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে। আপনি অনেক সুস্থ থাকবেন।
1. স্যুপের উপকারিতা
আপনি গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ, ভাইরাস এবং ফ্লু এড়াতে স্যুপ পান করতে পারেন। শীতকালে স্যুপ পান করা খুবই উপকারী। এর জন্য টমেটো স্যুপ, চিকেন স্যুপ, ভেজিটেবল স্যুপ পান করতে পারেন। এ ছাড়া ব্রকোলির স্যুপও উপকারী। স্যুপ পান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
2. ভিনেগার জল দিয়ে স্নান করুন
গর্ভাবস্থায় বা গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে ভিনেগারের জল দিয়ে স্নান করতে পারেন। এজন্য হালকা গরম জলে ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এই জল দিয়ে স্নান করলে জ্বরে দারুণ আরাম পাওয়া যাবে।
3. কাশির জন্য কড়া
শীতকালে, অনাক্রম্যতা শক্তিশালী করতে প্রায়শই ক্বাথ পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। গর্ভাবস্থায় জ্বর থাকলেও ক্বাথ পান করলে উপকার পাওয়া যায়। এর জন্য আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ, কালো মরিচের ক্বাথ তৈরি করে পান করতে পারেন। এছাড়া তুলসী-আদা চা পান করাও উপকারী। ক্বাথও শ্লেষ্মা দূর করে।
4. গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম নিন
গর্ভাবস্থায় বিশ্রামও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় জ্বর থেকে মুক্তি পেতে আপনার পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ। শিথিলতা স্ট্রেস উপশম করে, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। সুষম খাদ্য এবং নিজেকে উষ্ণ রাখলে আপনার জ্বর কয়েক দিনের মধ্যেই কমে যাবে।
5. ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য
সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকার জন্য আপনার ডায়েটে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন এবং ফাইবার থাকা উচিৎ। এই জন্য, আপনার খাদ্যতালিকায় সব ফল, সবজি এবং ডাল অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ। এছাড়াও আপনার খাদ্যতালিকায় দুধ, ঘি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন।
6. প্রচুর জল পান করুন
হাইড্রেটেড থাকার মাধ্যমে আপনি অনেক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় জ্বর থেকে মুক্তি পেতে হাইড্রেটেড থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য দিনে ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন। হাইড্রেটেড থাকার জন্য আপনি নারকেল জল, ফলের রসও পান করতে পারেন।
7. তুলসী পাতা
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং জ্বর সারাতে তুলসী পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য এক গ্লাস জলে ৫-৮টি তুলসী পাতা দিয়ে ফুটতে দিন। তারপর তা ছেঁকে পান করুন। দিনে 1-2 বার এই জল পান করলে খুব আরাম পাবেন। তুলসী পাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।
8. স্টিমিং
ঠাণ্ডা ও জ্বর থেকে মুক্তি পেতে বাষ্পও খেতে পারেন। গলায় জমে থাকা কফ বাষ্প খেলে সহজেই দূর হয়। সর্দি-কাশির কারণে জ্বর হলে বাষ্প নিঃশ্বাসে নিলে অনেক উপশম হবে। আপনি এর জন্য একটি স্টিমার ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে পাত্রে পানি গরম করে ভাপ নিন। ভাপ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
9. সরিষা বীজ
সরিষার জল পান করলেও জ্বরে উপশম পাওয়া যায়। এর জন্য আপনি এক গ্লাস জল গরম করুন। এতে সরিষা বাটা দিয়ে ৫ মিনিট রাখুন। এর পর তা ছেঁকে পান করুন।
10. কপালে একটি ঠান্ডা ব্যান্ডেজ রাখুন
গর্ভবতী মহিলারাও গর্ভাবস্থায় জ্বর থেকে মুক্তি পেতে কপালে ঠান্ডা ব্যান্ডেজ রাখতে পারেন। এজন্য একটি সুতির কাপড় ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে ভালো করে ছেঁকে নিন। এবার এই ব্যান্ডেজটি কপালে রাখুন এবং পরিবর্তন করতে থাকুন।
কিভাবে গর্ভাবস্থায় জ্বর প্রতিরোধ করা যায়
গর্ভাবস্থায় মহিলারা প্রায়ই সর্দি-কাশি, সর্দি এবং জ্বরে সমস্যায় পড়েন। তবে কিছু ব্যবস্থা মেনে চললে জ্বর থেকে বাঁচতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় জ্বর এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শে ফ্লু ভ্যাকসিন নিন।
হাত পরিষ্কার রাখুন। খাবার খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। গর্ভাবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা উচিৎ। যাতে তারা তাদের সংক্রমণ এড়াতে পারে।
বাড়ির আশেপাশে পরিচ্ছন্নতার পূর্ণ খেয়াল রাখুন।
এর পরেও জ্বর হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
গর্ভাবস্থায় জ্বর সারাতে এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সম্পূর্ণ নিরাময় নয়। তাই কয়েকদিন জ্বরের উন্নতি না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর সারাতে ওষুধও খেতে পারেন।
No comments: