বাচ্চাদের কান চুলকায় কেন? জেনে নিন এর কারণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
নতুন বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের প্রতিটি ছোটখাটো বিবরণে মনোযোগ দেন। কান্নার আওয়াজ থেকে শুরু করে তাদের প্রতিটি নড়াচড়ায় অভিভাবকদের মনোযোগ চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আপনি কি কখনও আপনার বাচ্চাদের কান আঁচড়াতে দেখেছেন? আপনি তাদের মনোযোগ দিতে? যদি না হয়, তাহলে আপনাদের জানিয়ে রাখি যে শিশুদের কানে চুলকানি হওয়া স্বাভাবিক, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি সমস্যাও হতে পারে। তাই আপনার শিশু যদি বারবার কানে চুলকাতে থাকে, তাহলে এই বিষয়টিকে একেবারেই অবহেলা করবেন না। বরং জানার চেষ্টা করুন কেন তিনি বারবার কান টানছেন বা চুলকাচ্ছেন। এই সময়ের মধ্যে যদি আপনি কোন সমস্যা লক্ষ্য করেন, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। আজ এই প্রবন্ধে আমরা শিশুদের কানে চুলকানির কারণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানব।
বাচ্চাদের কান চুলকায় কেন?
1. কানের চারপাশে ফুসকুড়ি
আপনার শিশু যদি বারবার কানে আঙ্গুল দেয় বা কানের চারপাশে চুলকাতে থাকে, তাহলে তার কানের চারপাশে ফুসকুড়ি হতে পারে। আসলে, কিছু শিশুর ত্বক শুষ্ক থাকে, যার কারণে তাদের কানের চারপাশে ফুসকুড়ি হয়। যার মধ্যে চুলকানির কারণে বারবার কানের কাছে হাত নেয়।
2. কানের সংক্রমণ
কানের ইনফেকশনে সমস্যা হলেও আপনার শিশু কানের চারপাশে বারবার খুলতে পারে। এ ছাড়া কানে আঙুল দেওয়া এবং কান টেনে ধরাও এর লক্ষণ হতে পারে। তাই আপনার সন্তান যদি ছোট হয় এবং এমন আচরণ করে, তাহলে তাদের এসব অপকর্ম উপেক্ষা করবেন না। এই অবস্থায় অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। কানের সংক্রমণ হলে শিশুদের নাক দিয়ে জল পড়া, অতিরিক্ত কান্নাকাটি, জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
3. ক্লান্তি
কিছু শিশু ক্লান্ত বোধ করলেও তাদের কানে চুলকায়। আপনার শিশু যদি বারবার কান স্পর্শ করে বা কানের চারপাশে হাত নাড়তে থাকে তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন সে ক্লান্ত। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। তাই তাদের ঘুমানোর চেষ্টা করুন। আপনি যদি তাদের রুটিন বোঝার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কখন আপনার শিশু ক্লান্ত এবং ঘুমের প্রয়োজন।
4. একজিমার কারণ
একজিমা কিছু শিশুর কানের সমস্যাও হতে পারে। শিশুদের কানের চারপাশে লালচেভাব, ফোলাভাব, পুঁজের মতো উপসর্গ দেখা দিলে এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। শিশুদের এই ধরনের সমস্যা উপেক্ষা করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ একজিমা ধীরে ধীরে মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
5. কানে জল
শিশুকে স্নানের করার সময় বা কোলে শুয়ে জল দেওয়ার সময় কানে জল পড়লেও এটি হতে পারে। এই অবস্থায়, একটি শুকনো কাপড় দিয়ে তাদের কানের চারপাশের অংশ মুছে ফেলার চেষ্টা করুন। এ সময় তার কানের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
6. কানে ময়লা
কানে ময়লা থাকলেও শিশুদের কানে খোলামেলা হওয়ার অভিযোগ থাকতে পারে। কানের খালে সাধারণত তুলো ঢোকানোর ফলে কানের মোম তৈরি হয়। তাই আপনার বাচ্চাদের কখনই নিজের কানের মোম অপসারণের চেষ্টা করতে দেবেন না। এর কারণে কানের মোম ভিতরের দিকে চলে যায়, যা শিশুদের কানে নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
7. সাবান এবং শ্যাম্পু কান
শিশুদের কানে খোলামেলা হওয়ার কারণও হতে পারে কানের ভিতর সাবান বা শ্যাম্পু যাওয়া। গোসলের পর কানে সাবান বা শ্যাম্পু অবশিষ্ট থাকার কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে সব সময় শিশুদের কান ঢেকে রেখে স্নান করুন।
শিশুর কান চুলকানি প্রতিরোধ
শিশুদের সবসময় ময়লা থেকে দূরে রাখুন।
তাদের বারবার কানে হাত বা আঙ্গুল দিতে দেবেন না। সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য।
গোসলের সময় সবসময় কানে তুলা লাগান। যাতে কানের ভিতরে সাবান বা জল না যায়।
নিজে থেকে কখনোই শিশুর কানের মোম অপসারণের চেষ্টা করবেন না। এ কারণে তাদের কানের গভীরে মোম চলে যেতে পারে, যার কারণে কানে পুঁজ, লালচে ভাবের মতো নানা সমস্যা হতে পারে।
কানের চারপাশ সবসময় পরিষ্কার করুন। তবে ভিতরের উপর কোন প্রকার চাপ দিবেন না।
শীতকালে সবসময় আপনার সন্তানের কান ঢেকে রাখুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুদের কানে কোনো ধরনের তেল ব্যবহার করবেন না। এর ফলে শিশুদের কানের সংক্রমণ হতে পারে।
কানের সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
কানে চুলকানির জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
যদি আপনার শিশু 3 দিনের বেশি কানে চুলকানি অনুভব করে, তবে এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান। যাতে যেকোনো ধরনের সমস্যা বাড়তে না পারে এবং কানের ইনফেকশন বা অন্যান্য সমস্যার সময়মতো চিকিৎসা করা যায়।
শিশুদের কানে ফোলাভাব একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আপনার শিশুর যদি ঘন ঘন কানে চুলকানি হয়, তবে এটি একটি গুরুতর অবস্থাও হতে পারে। তাই শিশুদের ছোটখাটো সমস্যাকে কখনোই অবহেলা করবেন না। যদি আপনার শিশুর কানে 3 দিনের বেশি চুলকানি হয়, তবে এই ক্ষেত্রে তাকে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। একটি গুরুতর পরিস্থিতি এড়াতে।
No comments: