পায়ের লোমম তোলার এই ভিন্ন পদ্ধতি জেনে নিন
সৌন্দর্য মানে কি শুধু মুখের রূপচর্চা? মোটেও না! মুখের ত্বক নিখুঁত অথচ হাত-পা পরিষ্কার নয়, এমন হলে কিন্তু আপনার নম্বর অনেকটাই কমে যাবে! সেজন্য আজকের আধুনিকারা মুখের পাশাপাশি সারা শরীরেরও সমান যত্ন নেন। আর সেই তালিকায় সবার প্রথমে রয়েছে মসৃণ, কোমল, রোমহীন হাত ও পা। হাত-পায়ে লোমের আধিক্য থাকলে দেখতেও ভালো লাগে না, নানা অস্বস্তির কারণও হয়৷ তাই বেশিরভাগ মেয়েই রোম তুলে হাত-পা পরিষ্কার রাখতেই পছন্দ করেন৷ রোম তোলার বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত শেভিং আর ওয়্যাক্সিং৷ থ্রেডিং, হেয়ার রিমুভিং ক্রিম, ইলেকট্রোলাইসিস এবং লেসার ট্রিটমেন্টের মতো আরও নানা উপায় রয়েছে। এবং সব কিছুর মতোই এই প্রতিটি পদ্ধতির কিছু সুবিধের দিক আর কিছু অসুবিধের দিকও রয়েছে। আসুন, এক নজরে আমরা দেখে নিই শরীরের বাড়তি রোম তোলার নানা পদ্ধতি আর সে সব পদ্ধতির ভালোমন্দ!
রোম তোলার নানা পদ্ধতি
মোমের মতো মসৃণ ত্বকের জন্য রোম তোলার বিভিন্ন পদ্ধতি
শেভিং
রোম তোলার সবচেয়ে সহজ আর চিরকালীন পদ্ধতি৷ একই সঙ্গে সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিও বটে! ত্বকের উপরভাগ থেকে রোম চেঁচে বাদ দেওয়ার নামই শেভিং৷ আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে ডিসপোজ়েবল অথবা ইলেকট্রিক রেজ়ার আর ভালো মানের শেভিং ফোম কিনে নিন৷ ঘরে বসেই নিমেষে সাফ করে নিতে পারবেন হাত পা৷ শেভিং ফোমের বদলে বডি অয়েল বা ময়েশ্চারাইজ়ারও ব্যবহার করতে পারেন, হাত পায়ে বাড়তি কোমলতা আসবে৷
শেভিং
সুবিধে
রোম তোলার সবচেয়ে সহজ আর ব্যথাহীন পদ্ধতি হল শেভিং৷ শুধু রেজ়ারের ব্লেডটা যেন ধারালো হয়! তাতে একদিকে দ্রুত টানে সব রোম তুলে ফেলতে পারবেন আর শেভিংয়ের পরবর্তী জ্বালাও হবে না৷ কম খরচে নিটোল ত্বক পাওয়ার এর চেয়ে ভালো উপায় আর আছে কি?
অসুবিধে
যেহেতু শুধু ত্বকের উপরের অংশের রোমই চেঁচে ফেলা হয়, তাই ফলাফল একেবারেই স্থায়ী নয়। শেভিংয়ের দিনদুয়েকের মধ্যেই ফের রোম গজিয়ে যায়। তা ছাড়া শেভিং করার পরে রোমের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার ভয়ও পান অনেকে।
হেয়ার রিমুভিং ক্রিম
শেভিংয়ের পরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় যে পদ্ধতি, সেটা হল হেয়ার রিমুভাল ক্রিম। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ক্রিম ত্বকের উপর লাগিয়ে পাঁচ দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। তারপর নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ক্রিম মুছে নিলে তার সঙ্গে সব রোমও উঠে যায়।
হেয়ার রিমুভিং ক্রিম
সুবিধে
এটিও ব্যথাহীন পদ্ধতি, অপেক্ষাকৃত কম খরচে করেও নেওয়া যায় ঝটপট। শেভিংয়ের চেয়ে হেয়ার রিমুভিং ক্রিমের ফলও বেশিদিন স্থায়ী হয়। প্রায় এক সপ্তাহ মসৃণ ত্বক পাবেন আপনি।
অসুবিধে
হেয়ার রিমুভিং ক্রিমে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক থাকে। এই রাসায়নিক রোমের স্বাভাবিক গঠনতন্ত্রকে ভেঙে দিতে পারে বলে রোম উঠে যায়। কিন্তু অন্যদিকে এই প্রচণ্ড কড়া রাসায়নিকের ফলে ত্বকে জ্বালা বা চুলকুনি হতে পারে, অ্যালার্জি বেরোতে পারে। হেয়ার রিমুভিং ক্রিম ত্বকে সহ্য হচ্ছে কিনা সেটা আগে দেখে নেওয়া দরকার। তাই ব্যবহার করার আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিন।
ওয়্যাক্সিং
ওয়্যাক্সিং
এই পদ্ধতিটি সাধারণত পার্লারে করাই ভালো, তবে অনেকে বাড়িতেও করেন। শরীরের যে অংশের রোম তুলতে হবে, সেখানে গরম বা ঠান্ডা ওয়্যাক্স লাগিয়ে তার উপর এক টুকরো কাপড় বা কাগজ চেপে চেপে বসিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ওয়্যাক্স শুকিয়ে এলে টান মেরে কাপড়ের টুকরোটি তুলে ফেলা হয় এবং তার সঙ্গেই সব রোমও উঠে হাত পা পরিষ্কার হয়ে যায়।
সুবিধে
ওয়্যাক্সিংয়ে একটু ব্যথা লাগলেও সুবিধের দিক হল, এই পদ্ধতিতে রোমের বৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত কম হয় এবং খুব রুক্ষ, খোঁচাখোঁচা হয়ে রোম গজায় না। ওয়্যাক্সিংয়ের পর আপনি অন্তত দু’ থেকে তিন সপ্তাহ নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আপনার হাত-পা মসৃণ ও পরিচ্ছন্ন থাকবে। ওয়্যাক্সিংয়ের পর হাত-পা চোখে পড়ার মতো কোমল ও মসৃণ থাকে এবং রোমের বৃদ্ধির গতিও ধীরে ধীরে কমে আসে।
ওয়্যাক্সিং
অসুবিধে
ওয়্যাক্সিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা হল, এই পদ্ধতিতে রোম একেবারে গোড়া থেকে উঠে যায় এবং পরবর্তী ওয়্যাক্সিংয়ের আগে অন্তত পাঁচ থেকে ছ’ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। কারণ লোম যথেষ্ট বড়ো না হলে ওয়্যাক্সিং করে তোলা যায় না। ফলে দুটি ওয়্যাক্সিংয়ের মধ্যবর্তী সময়ে শরীরে হালকা রোম আপনাকে মেনে নিতেই হবে!
ইলেকট্রোলাইসিস
ইলেকট্রোলাইসিস
এতক্ষণ পর্যন্ত যে পদ্ধতিগুলো আমরা আলোচনা করছিলাম, তার সবগুলোই সাময়িক পদ্ধতি অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর ফের রোম গজিয়ে ওঠে। কিন্তু ইলেকট্রোলাইসিস পদ্ধতিতে রোম পাকাপাকি নির্মূল করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে রোমের গোড়ায় ছোট্ট করে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালিয়ে ফলিকলগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেওয়া হয়। মাত্র কয়েকটা সেশন নিলেই শরীরের অবাঞ্ছিত রোম চিরতরে বিদায় নেয়। যে কোনও ধরনের ত্বক বা চুলেই ইলেকট্রোলাইসিস করা সম্ভব।
সুবিধে
অবাঞ্ছিত লোমের হাত থেকে পাকাপাকি মুক্তি পাওয়া যায় এই পদ্ধতিতে। কিন্তু নিজে নিজে ইলেকট্রোলাইসিস করা সম্ভব নয়। পেশাদারের সাহায্য আপনাকে নিতেই হবে। লেসার পদ্ধতির চেয়েও ইলেকট্রোলাইসিস সুবিধেজনক কারণ এতে খরচ অপেক্ষাকৃত কম আর ফলোআপও বেশিবার করতে হয় না।
রোমহীন মসৃণ ত্বক
অসুবিধে
ইলেকট্রোলাইসিস পদ্ধতিটি শেষ করতে অসীম ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ একটি একটি করে রোম বিনষ্ট করা হয় এই পদ্ধতিতে। ফলে ধৈর্যের পাশাপাশি হাতে প্রচুর সময়ও থাকা দরকার। তা ছাড়া এই পদ্ধতি করানোর পর রোমছিদ্রে সাময়িক ব্যথা আর জ্বালাভাবও হতে পারে। তবে আপনার সহনশক্তি কতটা, তার উপর ব্যথার বিষয়টা নির্ভর করবে।
লেসার ট্রিটমেন্ট
এটিও লোম নির্মূল করার আর একটি স্থায়ী পদ্ধতি। হেয়ার ফলিকলগুলো লেসার রশ্মি দিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয় এই পদ্ধতিতে। যাঁদের শরীরে রোমের ঘনত্ব বেশি, তাঁদের জন্য লেসার খুবই কার্যকরী।
সুবিধে
এই পদ্ধতি অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় ব্যথাহীন বললেই চলে এবং এর ফলাফলও স্থায়ী বলে বারবার করানোর কোনও ঝঞ্ঝাট নেই।
অসুবিধে
লেসার ট্রিটমেন্ট একটা দীর্ঘ সময় ধরে করাতে হয়। একটি হেয়ার ফলিকল থেকে রোম গজিয়ে ত্বকের উপর দেখা গেলে তবেই তার উপর লেসার প্রয়োগ করা যায়। এবার মুশকিল হল, এক একটি হেয়ার ফলিকল থেকে একের বেশি রোম গজাতে পারে এবং সব রোম একসঙ্গে বেরোয় না। ফলে যতদিন হেয়ার ফলিকল থেকে সব রোম না বেরোচ্ছে, লেসার চালিয়ে যেতে হয়৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই একাধিক সিটিং দরকার হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে প্রক্রিয়াটি চলে৷ তা ছাড়া লেসার করার খরচও অনেক৷
এপিলেটর
এই পদ্ধতিটি বাড়িতে বসেই করা সম্ভব৷ ব্যাটারি-চালিত একটি যন্ত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেই অংশের রোম তোলা হয়৷ এ ক্ষেত্রেও লোম একদম হেয়ার ফলিকল থেকেই উঠে যায়।
এপিলেটর
সুবিধে
যেহেতু এপিলেটর দিয়ে একদম গোড়া থেকে রোম তুলে ফেলা হয়, তাই নতুন করে রোম গজাতে বেশ অনেকটাই সময় লাগে। এই পদ্ধতিতে আপনি অন্তত দু’ থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত লোমহীন মসৃণ ত্বক পেতে পারেন। রোমের বৃদ্ধিও এই পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে কমে আসে। বাড়ির নিরিবিলিতে বসে রোম তোলার অন্যতম ভালো উপায় এটি। হাত ও পায়ের রোম তোলার ক্ষেত্রে এপিলেটর বেশ ভালো কাজ করে।
অসুবিধে
এপিলেটর ব্যবহার করতে হলে আপনার সহ্যশক্তি কিন্তু অনেকটাই বেশি হতে হবে, কারণ এতে বেশ ভালোই ব্যথা লাগে। শুধু এই কারণেই অনেক মেয়ে এপিলেটর এড়িয়ে চলেন। শরীরের নরম অংশে এপিলেটর ব্যবহার করলে ব্যথা তো বেশি লাগেই, লাল হয়ে জ্বালাভাবও দেখা দিতে পারে।
থ্রেডিং
লোম তোলার এই পদ্ধতিটির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। মূলত মুখের বাড়তি রোম তুলতে বেশিরভাগ মেয়ে থ্রেডিংয়ের উপরেই ভরসা রাখেন। ভুরু, ঠোঁটের উপরের অংশ, চিবুক ও কপালে রোমের আধিক্য থাকলে থ্রে়ডিং করে নেওয়াই সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী উপায়
থ্রেডিং
সুবিধে
থ্রেডিং করে তিন-চারটি লোম একসঙ্গে তুলে ফেলা যায়, ব্যথাও অপেক্ষাকৃত কম লাগে। তা ছাড়া থ্রেডিং করালে মুখের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও ভয় নেই।
অসুবিধে
সময় অনেক বেশি লাগে বলে শরীরের অপেক্ষাকৃত বড়ো অংশ জুড়ে থ্রেডিং করা বেশ মুশকিলের কাজ। তা ছাড়া নিজে নিজে থ্রেডিং করা, বিশেষ করে ভুরুর শেপ আনা সম্ভব নয়। আপনাকে থ্রেডিংয়ের কৌশলও জানতে হবে। তাই পার্লারে পেশাদারের কাছে থ্রেডিং করানোই সবচেয়ে ভালো।
No comments: