ঠাণ্ডার সঙ্গে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের 'শঙ্কা', জেনে নিন এর লক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
আজকাল, সারা বিশ্ব থেকে হার্ট অ্যাটাকের অনেক ঘটনা রিপোর্ট করা হচ্ছে শীতের মরসুম যতই ঘনিয়ে আসছে, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক সমস্যা বেড়েছে এবং এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল হৃদরোগ। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি বিশেষ করে ঠান্ডা ঋতুতে দেখা যায়। এই ঋতুতে হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। আসুন জেনে নিই শীতে কীভাবে হার্টের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া যায় এবং হার্ট অ্যাটাক এড়াতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
হার্ট অ্যাটাক এবং ঠান্ডার মধ্যে সম্পর্ক: ঠান্ডা আবহাওয়া আমাদের হার্টের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যখন তাপমাত্রা কমে যায়, তখন শরীর তার অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখতে কঠোর পরিশ্রম করে। এ কারণে শরীরের রক্তনালীগুলো সরু হয়ে যায়, যা রক্ত চলাচল কমিয়ে রক্তচাপ বাড়ায়। ফলে শরীরে রক্ত পাম্প করতে হার্টকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এবং যদি ইতিমধ্যেই হৃদরোগ থাকে তবে এই অবস্থা বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে। শীতের মৌসুমে এমনও দেখা যায় যে মানুষ কম বাইরে যায়, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কমে যায় এবং এটি হার্টের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। উপরন্তু, ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য শরীরের রক্ত প্রবাহের পরিবর্তন হতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ: শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া খুবই জরুরি। অনেক সময় হার্টের সমস্যার লক্ষণ শুরুতেই ধরা পড়ে, কিন্তু আমরা তা উপেক্ষা করি। হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: বুকে ব্যথা বা চাপ: এই ব্যথা হঠাৎ অনুভূত হতে পারে এবং কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত থাকতে পারে। কখনও কখনও এই ব্যথা কাঁধ, ঘাড়, বাহু বা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শ্বাসকষ্ট : শ্বাস নিতে সমস্যা হলে তা হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে। মাথা ঘোরা বা দুর্বল বোধ: হঠাৎ মাথা ঘোরা অনুভব করলে তা হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। ঘাম এবং বমি বমি ভাব: হার্ট অ্যাটাকের কারণে প্রায়ই ঘাম হয় এবং বমি বমি ভাব হয়। এই লক্ষণগুলি সনাক্ত করা এবং সঠিক সময়ে চিকিত্সা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি কোন ধরনের উপসর্গ অনুভব করেন, অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে? হার্ট অ্যাটাক যে কোনো বয়সের ব্যক্তির হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। বয়স: সাধারণত, 45 বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং 55 বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের কারো যদি হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ থাকে, তাহলে আপনিও উচ্চ ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। খারাপ জীবনধারা: ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, অস্বাস্থ্যকর খাবার, স্থূলতা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যান্য রোগ: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো রোগও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
শীতকালে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের টিপস: শীতে আপনার হার্টকে সুস্থ রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে এটি অসম্ভব নয়। এই মৌসুমে হার্ট সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি বাড়লেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়ানো যায়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হল: 1. শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন শীতে অলসতা বাড়তে পারে, তবে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম যেমন যোগব্যায়াম, সাঁতার কাটা, হাঁটা বা দৌড়ানো হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া শারীরিক ক্রিয়াকলাপ শরীরে রক্ত চলাচল ভালো রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
2. একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য খান আপনার খাদ্য হার্টের স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। একটি সুষম খাদ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভাল চর্বি প্রয়োজন। আপনার খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, গোটা শস্য, মাছ ও মুরগির মাংস অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি শুধু শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে না, হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকেও রক্ষা করে।
3. প্রচণ্ড ঠান্ডা এড়িয়ে চলুন যারা ইতিমধ্যেই হৃদরোগে ভুগছেন তাদের ঠান্ডায় বেশি সময় কাটানো উচিত নয়। বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে গরম কাপড় পরুন এবং শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে রাখুন। শারীরিক কার্যকলাপের জন্য একটি উষ্ণ পরিবেশ চয়ন করুন।
4. লেয়ারিং: শীতকালে বাইরে যাওয়ার সময় সবসময় গরম এবং আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। লেয়ারিং কৌশল অবলম্বন করে, আপনি আপনার শরীরকে ঠান্ডা থেকে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে পারেন। ঠান্ডায় বাইরে যাওয়ার আগে গরম পোশাক, গ্লাভস এবং মাফলার ব্যবহার করুন।
5. অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চলুন: অনেকেই শীতকালে অ্যালকোহল পান করেন, তবে এটি হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ দিতে পারে। অ্যালকোহল সেবনের ফলে শরীরের তাপমাত্রার ওঠানামা হতে পারে, যা হার্টের উপর চাপ বাড়ায়। তাই শীতকালে অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
Labels:
health
No comments: