বাংলাদেশ সরকার তার ব্যর্থতা আড়াল করতে শেখ হাসিনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, বিএনপি ও করছে সহযোগীতা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনূসের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হলে আশা করা হয়েছিল যে দেশটি অচিরেই রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পাবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তোন উন্নতি চোখে পড়ছে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মোহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, নির্বাচনী সংস্কারের পরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এসবের মধ্যে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে, জনরোষ এড়াতে ইউনূস সরকার শেখ হাসিনাকে ঢাল বানানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি!
আসলে, প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস তার সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হওয়ার বিষয়ে একটি বড় বিবৃতি দিয়েছেন, তিনি বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি করবে, মোহাম্মদ ইউনূসের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস এ তথ্য দিয়েছে। হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনূস বলেছেন, তার সরকার হত্যার প্রতিটি মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
মোহাম্মদ ইউনূসের এই বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক তাৎপর্য টানা হচ্ছে, কারণ কয়েকদিন আগে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর একজন সিনিয়র নেতা ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন। ইউনূস সরকার সংস্কারের আড়ালে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
ব্যর্থতা থেকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন?
গত মাসে রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল, কারণ তিনি বলেছিলেন যে তার কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দলিল প্রমাণ নেই। সম্প্রতি ঢাকার বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে সংবিধান থেকে 'ধর্মনিরপেক্ষ-সমাজবাদী' শব্দটি বাদ দেওয়ার দাবিতে ইউনূস সরকারকে বিতর্কে জড়াতে দেখা যায়।
এছাড়াও, সরকার অর্থনৈতিক ফ্রন্টেও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যেখানে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার 3 মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০.৮৭%-এ পৌঁছেছে, যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও ১২.৬৬%-এ পৌঁছেছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অক্টোবরে আবারও নীতিগত হার বাড়িয়েছে, যা ২০২২ সালের মে থেকে ১১তম বৃদ্ধি ছিল। এ কারণে ব্যবসায়িক ঋণের সুদের হার আবার বাড়বে।
অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির সমর্থন পেয়েছে
মনে করা হচ্ছে, এই সব ব্যর্থতা আড়াল করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যাতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া যায়। এই কারণেই ইউনূস সরকার শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, মাত্র কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে দাবি করেছিল, অথচ এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভারত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবির কথা বলছেন প্রধান।
এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বিরোধী দল বিএনপির সমর্থনও পেয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ করে বিএনপি বলেছে, শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করছে ভারত।
ভারতকে অভিযুক্ত করেছে বিএনপি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করছে ভারত। তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনার পালানোয় ভারত ব্যথিত, হাসিনাকে বহিষ্কারের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ভারত শেখ হাসিনাকে দেশে ও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন রিজভী। শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় পেয়ে বিরোধীদের এতটাই ক্ষুব্ধ করেছেন যে, বিএনপি নেতা বলেছেন, 'ভারত যদি শেখ হাসিনাকে এত পছন্দ করে, তাহলে তার জন্য তাজমহল তৈরি করা উচিত।'
আবারও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচন না করে প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকেছেন, তার দল জনগণকে লুটপাট ও গণতন্ত্র হত্যার সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে এখন বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারত থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেছেন, 'এখানে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।'
জানুয়ারির পরই কি নির্বাচন সম্ভব?
আগাম নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বলেছেন, নির্বাচন ও সংবিধানসহ অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে ইতোমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। কিন্তু এসব কমিটি এখনো তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়নি। তথ্যমতে, অনেক কমিটি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারে, এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
No comments: