পূজার সময় ঘণ্টা বাজানো হয় কেন? কোন ধাতু বেশি শুভ জানেন?
আমরা যখন মন্দিরে যাই, তখন প্রথমেই আমরা ঘণ্টা বাজাই। একইভাবে, যখন আমরা বাড়িতে পূজা শুরু করি, তখন প্রথমেই আমরা ঘণ্টা বাজাই। শাস্ত্র অনুসারে, ঘণ্টা বা ঘোঁট বাজিয়ে আমরা ঈশ্বরকে আমন্ত্রণ জানাই এবং যার মন্দিরে আমরা গিয়েছি সেই দেবতাকে মন্দিরে আমাদের আগমনের কথা জানাই। এর পাশাপাশি, বিজ্ঞানীদের মতে, ঘণ্টা বাজানোর ফলে উৎপন্ন কম্পন পরিবেশে উপস্থিত ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অণুজীবকে ধ্বংস করে। এর পাশাপাশি, ঘণ্টার কম্পন আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্যও বজায় রাখে।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে যখন কোনও মন্দির বা উপাসনালয়ে ঘণ্টা, শঙ্খ ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়, তখন দেব-দেবীর মূর্তিতে চেতনা জাগ্রত হয়। ঘণ্টা বাজানোর মাধ্যমে, ঈশ্বরের সামনে আপনার উপস্থিতিও নিবন্ধিত হয়। স্কন্দ পুরাণ অনুসারে, ঘণ্টা থেকে 'ওঁ' ধ্বনি নির্গত হয়, যা নেতিবাচক শক্তিকে ধ্বংস করে। ঘণ্টা থেকে নির্গত শব্দ শরীরের সাতটি চক্রকে প্রভাবিত করে। এর পাশাপাশি, অনেক বিশ্বাস আছে যে কোনও ধাতু দিয়ে তৈরি ঘণ্টা বেশি শুভ। আসুন জেনে নিই বাড়িতে পূজার সময় কোন ধাতুর ঘণ্টা বাজানো বেশি শুভ।
তামার ঘণ্টা
তামা একটি বিশুদ্ধ এবং শক্তি সমৃদ্ধ ধাতু। এ থেকে তৈরি ঘণ্টা থেকে নির্গত শব্দ পরিবেশে নেতিবাচক শক্তি হ্রাস করে। এটি শরীরের তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর শব্দ কান ও মনকে শান্ত করে। তামা সূর্য এবং আগুনের প্রতীক, তাই এটিকে শক্তি এবং শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পিতলের ঘণ্টা
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ঘণ্টাটি পিতলের তৈরি। এর ধ্বনি সবচেয়ে অনুরণিত এবং স্থিতিশীল, যা উপাসনার পরিবেশকে আরও পবিত্র করে তোলে। পিতল হল তামা এবং দস্তার মিশ্রণ, যা শব্দের মান উন্নত করে। এর শব্দ মস্তিষ্কে ইতিবাচক সংকেত পাঠায়, যা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
অষ্টধাতুর ঘণ্টা
অষ্টাধাতু আটটি পবিত্র ধাতু দিয়ে গঠিত। এতে সোনা, রূপা, তামা, সীসা, টিন, দস্তা, লোহা এবং পারদ রয়েছে। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং শুভ বলে মনে করা হয়। এর থেকে নির্গত শব্দ শরীরের শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখে।
রূপালী ঘণ্টা
রূপা হল চাঁদের সাথে সম্পর্কিত ধাতু, যা মনকে শান্তি, ভারসাম্য এবং শীতলতা দেয়। শিব, চন্দ্র এবং লক্ষ্মী পূজায় রূপার ঘণ্টা কার্যকর বলে মনে করা হয়। এর শব্দ মানসিক চাপ কমায়।
সোনার ঘণ্টা
সোনাকে সবচেয়ে পবিত্র এবং সাত্ত্বিক ধাতু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ঘণ্টা থেকে নির্গত শব্দ ধীর কিন্তু গভীর, যা আধ্যাত্মিক শান্তি দেয়। এটি ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে। দেবী লক্ষ্মী এবং তান্ত্রিক পূজায় সোনার ঘণ্টা অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়।
কোন ঘণ্টা বেশি শুভ?
শাস্ত্র অনুসারে, প্রতিদিনের পূজার জন্য পিতল বা তামার ঘণ্টা সবচেয়ে ভালো। একই সাথে, বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান বা তান্ত্রিক অনুশীলনের জন্য, অষ্টধাতু বা রূপার ঘণ্টা শুভ বলে বিবেচিত হয়। আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য সোনার ঘণ্টা ভালো। এটি শুধুমাত্র বিশেষ অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই: